Newspaper Archives
দেশে স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি রোগের প্রথম চিকিৎসা
২২ কোটি টাকার ওষুধে জিন থেরাপি পেলো শিশু রায়হান
- স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে: আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে মা
- নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করলেন চিকিৎসকরা
চিকিৎসকরা বলেন, রায়হানকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আরও কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ওই শিশু সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
রায়হানের শরীরে জিন থেরাপি প্রয়োগের সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম, নোভার্টিসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রিয়াদসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের উপস্থিতিতে শিশু রায়হানের শরীরে সফলভাবে ইনজেকশন পুশ করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনাল মাসকুলার এট্রফি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ু রোগ যা জন্মগতভাবে মানবদেহে থাকে। জিনগত ত্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাংসপেশি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে এসব শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকে। পরবর্তীতে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে আক্রান্ত শিশুরা মৃত্যুবরণ করে।
তারা বলেন, এই রোগের জিন থেরাপি চিকিৎসায় ডোজের মূল্য ২২ কোটি টাকার বেশি। তবে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালকে এটি বিনামূল্যে প্রদান করেছে বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের নোভার্টিস কোম্পানি। এই ইনজেকশন আমেরিকায় বাজারজাত করা হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এই ওষুধ ক্রয় করে থাকে। যারা দরিদ্র রাষ্ট্র তাদের দেশে এই ওষুধ বিনামূল্যে সীমিত সংখ্যক পাঠানোর জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই লটারিতেই বাংলাদেশের অত্যাধুনিক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগ অংশগ্রহন করে। আক্রান্ত কয়েক জন শিশুর শরীরের রক্ত ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। লটারিতে সৌভাগ্যবান রায়হানকে নির্বাচিত করা হয়।
রায়হানের মা রিনা আক্তারের বিবাহ হয় ১৩ বছর আগে। তার স্বামী রফিকুল ইসলাম সৌদি আরবে লেবার হিসেবে কাজ করছেন। রায়হানের বয়স ২৩ মাস। রায়হানের শরীরে ইনজেকশন পুশ করার পর তার মা রিনা আক্তারের সঙ্গে ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির কথা হয়।
আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে রিনা আক্তার বলেন, স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কখনো ভাবিনি ২২ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ওষুধের চিকিৎসা আমার সন্তানকে করাতে পারবো। এক লাখ টাকা যোগাড় করারই সামর্থ্য নেই।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাদের চেষ্টার কারণেই আমার কলিজার ধনকে সুচিকিৎসা দিতে পারছি। এটা আমার প্রথম সন্তান।
রায়হানের শরীরে ইনজেকশন পুশ করার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বিরল স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি রোগের এই দামি ওষুধ যাতে হাতের কাছে পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য হয় সেই চেষ্টা তারা করবেন। ১০ থেকে ১২ হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু সংখ্যক শিশু এই রোগে আক্রান্ত। দুই বছরের মধ্যে আক্রান্ত শিশুরা মারা যায়। শুধুমাত্র ওই ইনজেকশনটি দিলেই বেশিরভাগ শিশু বেঁচে যায়। দুটি খারাপ জিন একসঙ্গে হলে এই রোগ হয়। এছাড়াও অন্যান্য জটিল রোগও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ নিরুৎসাহিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপি চিকিৎসা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি আশার দিক। কিন্তু এর যে ব্যয়, সেটি আসলে রোগীদের জন্য বহন করা সম্ভব না। আমরা চাইলেও এ নিয়ে কিছু করতে পারছি না।
সচিব বলেন, আমরা আশা করছি একটা পর্যায়ে ওষুধটির দাম কমে যাবে। আমাদের হাতের নাগালে নেমে আসবে। তখন আমরা এই চিকিৎসা আমাদের দেশে নিয়মিত করতে পারবো।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ১০ বছরের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক দ্বার উন্মোচন হয়েছে। একটা বাচ্চাকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে আমরা বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছি। সে এখন নিশ্চিতভাবে আকাশ দেখতে পারবে, নিঃশ্বাস নিতে পারবে। এজন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেছেন, সুস্থ মানব সম্পদ ব্যতীত বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনভর স্বপ্ন দেখে গেছেন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। যে দেশের মানুষ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে একটি সুন্দর জাতি গঠনের মাধ্যমে মর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে। তিনি স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করেই সংবিধানে মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন।
আজ রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের সভাকক্ষে বিশ্ব এ্যালঝেইমার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. পরিতোষ কুমার সরকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মালিহা হালিম, বিশেষ অতিথির বক্তব্য করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, এ্যালঝেইমার (স্মৃতি ভ্রষ্টতা) রোগটি এখন অনেক বেশি সনাক্ত হচ্ছে। তাই এই রোগের প্রতিকারের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করা আবশ্যক। লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও এখানকার ডাক্তারগণ যত্নের সাথে এসব রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এসময় তিনি এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মোট সাতটি বিভাগের উপর এ্যলঝেইমা নিয়ে গবেষণার সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
তিনি দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য এই সচিত্র প্রতিবেদনটি শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উপস্থাপন করার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত